Hospital Maintenance Policy
of
MUKTI NARI-O-SHISHU UNNAYAN SANGASTHA (MNSUS)

মমতা মা, শিশু স্বাস্থ্য ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

 

নীতিমালা

ভূমিকা

বাংলাদেশ দরিদ্রতম দেশ। এ দেশের ৭৫% মানুষ দরিদ্র বিধায় তাদের জীবন যাত্রার মানও অনুন্নত পাশাপাশি নিরক্ষরতা এবং অসচেতনতা দরিদ্র মানুষকে মানবেতর জীবন যাপনে বাধ্য করছে। মুক্তি নারী ও শিশু উন্নয়ন সংস্থা, এই দরিদ্র, অসহায়, নির্যাতিত মানুষের উন্নয়ন ও আত্ম-নির্ভরশীলতা এবং আত্ম-কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র বিমোচন, স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করণ এবং মানবাধিকার সংরক্ষণের লক্ষ্যে (১৯৯০) সাল প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে কাজ করে যাচ্ছে।

সংস্থার লক্ষ্য

একটি সুন্দর সমাজ যা অর্থনৈতিক ভাবে সাম্য, সামাজিক ভাবে নিরপেক্ষ, পরিবেশগত ভাবে নিরাপদ, গণতান্ত্রিকভাবে কার্যকর, যেখানে পুরুষ ও মহিলা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ন্যায্যতার ভিত্তিতে সমান অধিকার ভোগ করে।


সংস্থার উদ্দেশ্য

ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, ও লিঙ্গ বৈষম ভেদে দেশের সকল হতদরিদ্র, দরিদ্র, দু:স্থ্য, নির্যাতিত, আইনী সহায়তা থেকে বঞ্চিত নিরক্ষর জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, মানবাধিকার সংরক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়নে সহায়তা করাই এই সংস্থার অন্যতম উদ্দ্যেশ্য। এই সংস্থা একটি অরাজনৈতিক এবং অলাভজনক সমাজসেবা মূলক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান হিসাবে কাজ করবে।

সংগঠনের বৈশিষ্ট্য সমূহ

  • নারী পুরুষের সমতা।
  • নারী পুরুষ একে অন্যের প্রতি বিশ্বস্ত ও শ্রদ্ধাশীল।
  • নারী কর্মীদের কোন প্রকার আচরণ দ্বারা আঘাত করা যাবে না। এরকম কাজ শাস্তি যোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
  • সংস্থায় নারীর জন্য আলাদা কোন কাজ চিহ্নিত করা যাবে না।
  • ধর্ম, বর্ণ, গোত্র ও লিঙ্গ বৈষম্যভেদে সকলের সমানাধিকারের বিশ্বাস।
  • পিতৃতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি দূরীকরনে সংস্থার সকল কর্মসূচীতে অঙ্গীকার।
  • অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি পোষন করা।
  • সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারী-পুরুষ এর সমতা নিশ্চিত করা।
  • নারীদের প্রতি আস্থা।
  • আদিবাসী, প্রতিবন্ধী, বেঁদে, হিজড়াসহ সকল প্রান্তিক জনগোষ্টিকে উন্নয়নের মূলস্রোতে আনার অঙ্গীকার।
  • দেশপ্রেম।
  • সততা, ন্যায়নিষ্টতা, শৃংঙ্খলা বজায় রাখা ও আস্থাশীল।
  • সেবাদানে অঙ্গিকারবদ্ধ।

মুক্তির প্রতিষ্ঠাতা জনাব মমতাজ আরা বেগম তার কর্মময় জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছেন, বাংলাদেশের এই দরিদ্র মানুষেরা তাদের সমস্যা ও উন্নয়ন চাহিদা সম্পর্কে পুরোপুরি সচেতন নয়। গ্রামে স্বাস্থ্য সুবিধা বিশেষ করে নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অপ্রতুল, তাছাড়া কুষ্টিয়া জেলায় স্বাস্থ্য সেবা প্রাপ্তির সুযোগ সুবিধাও কম। যা কিছু ক্লিনিক গড়ে উঠেছে সব শহর ভিত্তিক। থানা ও গ্রাম ভিত্তিক স্বাস্থ্য সেবা সুবিধা নাই বললেই চলে। এসব দিক বিবেচনা করে মুক্তি নারী ও শিশু উন্নয়ন সংস্থা, কুষ্টিয়া জেলার অবহেলিত জনপদ মীরপুর উপজেলার বারুইপাড়া ইউনিয়নের তাঁতীবন্ধ গ্রামে দুস্থ অসহায় স্বাস্থ্য বঞ্চিত বিশেষ করে প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত নারীদের সু-চিকিৎসা প্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মমতা মা শিশু ও স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নিজ জমির উপর স্থাপন করেছে।

বর্তমান বিশ্ব জনসংখ্যা প্রায় ৬০০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। প্রায় এক পঞ্চমাংশ অর্থাৎ একশো কোটিরও বেশী জনসংখ্যা কিশোর-কিশোরী জনগোষ্টির সমাবেশ এর আগে কখনো দেখা যায়নি। 

আজকের এই বিপুল সংখ্যক তরুণ-তরুণী, মানব-মানবীই আগামী শতাব্দির পরিবার, দেশ ও জাতির কর্ণধার। একটি জাতির সঠিক কল্যাণ ও সমৃদ্ধি নির্ভর করে স্বাস্থ্যবান ও শৃংখলা পরায়ন তরুণ ও যুব সমাজের উপর। সুতরাং এই সম্ভাবনাময় তরুণ বয়সীদের প্রজনন স্বাস্থ্যের পরিচর্যা সারা জীবনের সুস্থতা ও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা অপরিহার্য। অথচ এই সম্ভাবনাময় তরুণ-তরুণীদের প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়টি এতদিন ছিল উপেক্ষিত। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলো তরুণী বয়সীদের প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে অসচেতনতা ও অবহেলার চিত্রটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এসব দেশে মা ও শিশুর উচ্চ মৃত্যুহার, মা ও শিশুর দীর্ঘকালীন রুগ্নতা, অনাকাঙ্খিত ঝুকিপূর্ণ গর্ভধারণ এবং প্রজননতন্ত্রের সংক্রমণের হার অনেক বেশী। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, প্রজনন তন্ত্র বিশেষ করে তরুণী বয়সীদের প্রজনন স্বাস্থ্য পরিচর্যার প্রতি উদাসীনতা।

প্রজনন স্বাস্থ্য মূলত সামগ্রিক স্বাস্থ্যের একটি অংশ। সুনির্দিষ্ট ভাবে বলা যায় যে, প্রজনন স্বাস্থ্য হলো প্রজনন তন্ত্রের স্বাস্থ্য, আর সন্তান জন্মদানের জন্য জড়িত মানব দেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ মিলেই প্রজনন তন্ত্র।

জনসংখ্যা উন্নয়ন বিষয়ক আর্ন্তজাতিক সম্মেলনে গৃহিত সংজ্ঞা অনুযায়ী, প্রজনন স্বাস্থ্য বলতে বুঝায় পরিপূর্ণ দৈহিক, মানসিক এবং সামাজিক কল্যাণের একটি অবস্থা।

বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ, এদেশের ৬৫% লোকই দারিদ্র সীমার নিচে বাস করে, ৭৫% লোকই দরিদ্র। যেখানে সকল জনগোষ্ঠির স্বাস্থ্য সুরক্ষা রাখার অন্তরায় সেখানে প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়টি ভয়ানক ভাবে উপেক্ষিত। কারণ হিসাবে বলা যায় আমাদের দেশে শিক্ষার হার অত্যন্ত কম। এদেশে নিরক্ষরতার হার অত্যধিক, পাশাপাশি ধর্মীয় গোড়ামী, কুসংস্কার, প্রচলিত অন্ধ বিশ্বাস, আমাদের লজ্জা জনিত দুর্বলতা প্রজনন স্বাস্থ্য সংরক্ষণে সাংঘাতিক অন্তরায়।

এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে বিবাহিত দম্পতির মধ্যে শতকরা ৪৭ ভাগ মহিলাই ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী। এদের মধ্যে শতকরা ৩৩ ভাগ মহিলাই ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সের মধ্যেই মা হয়।
বাংলাদেশে ১৫-১৯ বছর বয়সীদের মধ্যে প্রজননহার বিশ্বের সর্বাপেক্ষা।

  • মায়ের বয়স ১৮ বছরের নীচে হওয়ায় বাংলাদেশের শতকরা ১৯ ভাগ জন্মই ঝুকিপূর্ণ।
  • বাংলাদেশে মাতৃ মৃত্যুহার প্রতিহাজার জন্মে ৪ এর উপর। কম বয়সী মায়েদের মৃত্যুহার ৫.৮ ভাগ।
  • তরুনী মায়েদের শিশু মৃত্যুহার প্রতিহাজার জীবিত জন্মে ৮৫ জন।
  • বেশীর ভাগই প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা পায় না, বিধায় পারিবারিক বিরোধ ও দাম্পত্য বিচ্ছেদ উদ্বেগজনক।
  • শতকরা ৫০ ভাগ মহিলা/কিশোরী প্রজননতন্ত্রের সংক্রামনে আক্রান্ত।

মুক্তি নারী ও শিশু উন্নয়ন সংস্থা, কুষ্টিয়া ১৯৯০ সাল থেকে তার কার্যক্রমের শুরু থেকেই সমাজ ও দেশের এই সম্ভাবনাময় আগামী দিনের জাতীর ভবিষ্যত সেবকদের প্রজনন স্বাস্থ্য পরিচর্যার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় এনে কাজ করে যাচ্ছে। যার ফলে ইতিমধ্যেই নিজ চেষ্টায় এবং দাতা সংস্থার সহযোগিতায় ৮৭টি কিশোরী বিদ্যালয়ের মাধ্যমে (৪৭x৩০) = ১৪১০ জন নিরক্ষর কিশোরীকে সাক্ষর দানের পাশাপাশি প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। বর্তমানে আরও ১০টি বিদ্যালয় পরিচালনা করে যাচ্ছে। এছাড়াও ২২জন কর্মীর মাধ্যমে শহর অঞ্চলের, বস্তিতে গ্রামের অসচেতন জনগোষ্ঠির কাছে যেয়ে উঠান বৈঠক, দলীয় বৈঠকের মাধ্যমে প্রজনন স্বাস্থ্য শিক্ষা বিষয়টি তুলে ধরেছে। সেই সাথে সংস্থা মীরপুর উপজেলার তাঁতীবন্ধ গ্রামে মুক্তি মমতা মা শিশু ও স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মানের মাধ্যমে একদিকে যেমন স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার মহান ব্রত নিয়ে কাজ করছে পাশাপাশি দক্ষ মানব সম্পদ তৈরী করে চলেছে।

মুক্তি বিশ্বাস করে স্বাস্থ্য সুরক্ষার অধিকার মানুষের মৌলিক ও মানবিক অধিকার। প্রজনন স্বাস্থ্য, স্বাস্থ্য রক্ষারই অংশ।

স্বাস্থ্য মানুষের মৌলিক অধিকার। স্বাস্থ্য সেবা সেই অধিকারের সোপান, সেখানে অধিকারের প্রশ্ন আছে সেখানে মানুষের কর্তব্যের বা অংশগ্রহণের বিষয়টি সম্পৃক্ত আমরা স্বাস্থ্য ভাল রাখব বললেইতো স্বাস্থ্য ভাল হয়ে যাবেনা। এজন্য প্রয়োজন স্বাস্থ্য অভ্যাস পালন ও কঠোর অনুশীলন। স্বাস্থ্য অর্জনে আমাদের দেশে বেশ কতগুলো বাধা দেখা যায় যেমন- বিভিন্ন প্রকারের সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব অধিক সংখ্যায় মা ও শিশুর মৃত্যু, শিশুর অভাব, জনসংখ্যা বৃদ্ধি গ্রামাঞ্চলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অপ্রতুলতা এবং সামাজিক কুসংস্কার ইত্যাদি। সাধারণ মানুষকে এসব বিষয়ে সজাগ করে তোলার জন্য স্বাস্থ্য পরিচর্যা সম্পর্কে জ্ঞানদান করা আবশ্যক।
সকল অন্ধ আচ্ছন্নতা কাটিয়ে, লাজ-লজ্জা দুর করে আমাদের সকলের প্রজনন স্বাস্থ্য সুরক্ষা করা আজকে নৈতিক দায়িত্ব ও মানবাধিকারের কাজ।
মুক্তি নারী ও শিশু উন্নয়ন সংস্থা মীরপুর উপজেলার বারুইপাড়া ইউনিয়নের তাঁতীবন্ধ গ্রামে মমতা মা, শিশু স্বাস্থ্য ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি হতদরিদ্র,দরিদ্র সাধারন মানুষরা যাতে খুব সহজে,সহজলভ্য ভাবে কোন প্রকার হয়রানি ব্যতিরেকে স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে পারে সে জন্য স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি ৭ (সাত) সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি দ্বারা পরিচালিত হবে। যেখানে মুক্তি সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক পদাধীকার বলে আহবায়ক/ সভাপতি থাকবেন। সংস্থার সিনিয়র ম্যানেজম্যান্ট টিমের মধ্যে থেকে বাকি সদস্যদের অর্ন্তভুক্ত করা হবে। এ ছাড়াও এলাকার সাধারন জনগনের অংশগ্রহন নিশ্চিত করার জন্য তাদের মধ্যে থেকেও যারা সামাজিক কাজের সাথে জড়িত থাকবেন তাদেরকে কমিটির সদস্য হিসাবে অর্ন্তভ’ক্ত করা হবে তবে এক্ষেত্রে এলাকা থেকে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব আসলে সাধারন পরিষদে/নির্বাহী পরিষদে আলোচনার মাধ্যমে অনুমতি গ্রহন করে সদস্য নির্বাচন করা যাবে। কমিটি নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্থানীয় ভাবে দুই জনকে রাখা বাধ্যতা মূলক বলে পরিগণিত হবে।

স্বাস্থ্য পরিচর্যার ৮টি উপাদান :

  • স্বাস্থ্য শিক্ষা (স্বাস্থ্য সম্বন্ধীয় সমস্যাগুলির নিবারন ও নিয়ন্ত্রন শিক্ষা)
  • মা ও শিশুর যত্ন এবং পরিবার পরিকল্পনা
  • প্রয়োজনীয় পুষ্ঠিসহ পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ
  • সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
  • আঞ্চলিক রোগ নিয়ন্ত্রন ও নিবারন
  • সাধারন ব্যাধী ও জখমের চিকিৎসা
  • অত্যাবশকীয় ঔষধের ব্যবস্থা
  • প্রয়োজনীয় অপারেশন নিশ্চিত করা

মমতা মা ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে কোন ধরনের রোগী স্বাস্থ্যসেবা পাবে ?
এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ধনী, দরিদ্র, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষ স্বাস্থ্য সেবা পাবেন। তবে এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যে সমস্ত রোগী আসবে তাঁদের আয়ের উৎস বিবেচনা করে তিনটি শ্রেণীতে বা গ্রেডে ভাগ করা যাবে। যথা-

  • গ্রেড A ধনী বা স্বচ্ছল (আয়ের উৎস ভাল) যাদের মাসিক আয় ৩৫০০০টাকা বা তদুর্দ্ধ
  • গ্রেড B মধ্যবিত্ত (আয়ের উৎস মোটামুটি ভাল) যাদের মাসিক আয় ২০,০০০টাকা থেকে ৩৪৯৯৯ টাকা
  • গ্রেড C দরিদ্র (আয়ের উৎস কম) যাদের আয় ১৫০০০ টাকা থেকে ১৯৯৯৯ টাকা
  • গ্রেড D হতদরিদ্র (আয়ের উৎস খুবই কম) যাদের মাসিক আয় ২০০০০টাকার নীচে

রোগীর ব্যায়ের ধরন :

গ্রেড A ধনী বা স্বচ্ছল (আয়ের উৎস ভাল) :
এই ধরনের রোগীদের,ক্লিনিক/হাসপাতালের রুগীদের স্বাস্থ্য সেবা গ্রহনের জন্য সমস্ত রকমের চিকিৎসা ব্যায়ভার বহন করতে হবে। অর্থাৎ প্রাইভেট ক্লিনিকগুলিতে রোগীদের জন্য যে পরিমান অর্থব্যায় করতে হয় এখানে ও সেই পরিমান অর্থ ব্যায় করতে হবে। চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য ক্লিনিক পরিচালিত কমিটি সেবার আর্থিক মূল্য নির্ধারন করবেন।

গ্রেড B মধ্যবিত্ত (আয়ের উৎস মোটামুটি ভাল) :
A এবং B গ্রেডের রোগীদের একই ধরনের চিকিৎসা সেবা দেয়া যেতে পারে। তবে বিশেষ ভাবে আর্থিক দিক বিবেচনা করে সেবা গ্রহীতার কাছ থেকে সেবার আর্থিক মূল্য কম নেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে নির্বাহী পরিচালকের অনুমতি গ্রহন করতে হবে।

গ্রেড C দরিদ্র (আয়ের উৎস কম) :
এই ধরনের রোগীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসা ব্যায় যা হবে (সংস্থার নির্বাহীর নির্দেশ ক্রমে) সেই অর্থের ৩০% থেকে ৪০% ব্যায় কম নেয়া যেতে পারে।

গ্রেড D হতদরিদ্র (আয়ের উৎস খুবই কম) :
যে সমস্ত রোগীর অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ তাঁদের ক্ষেত্রে (সংস্থার নির্বাহীর অনুমোদন ক্রমে) চিকিৎসাব্যায় বাবদ যাবতীয় খরচের ৫০% কমে গ্রহন করা হবে। অপারেশনের ক্ষেত্রে ডাক্তারের ফি এর ক্ষেত্রে বিষয়টি প্রযোজ্য হবে।

চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য আয়ের উৎসসমূহ :

  • চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য ক্লিনিকের রক্ষনাবেক্ষন,সরঞ্জামাদি,ঔষধপত্র এবং কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন ভাতা বেবদ অর্থের প্রয়োজন, সেই অর্থ সংগ্রহের জন্য ক্লিনিক ব্যবস্থাপনা কমিটি নি¤œ বর্নিত উপায়ে অর্থ/তহবিল সংগ্রহ করবেন।

তহবিল সংগ্রহের ধরন :

  • স্থানীয় দাতাদের অনুদান
  • যে সমস্ত সংস্থা স্বাস্থ্য সেবা দিচ্ছে তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত আর্থিক এবং উপকরন প্রাপ্তি সহযোগিতা গ্রহন
  • বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের সহায়তা গ্রহন
  • উপজেলা/ইউনিয়ন পরিষদের সহায়তা নেওয়া যেতে পারে
  • সরকারি দপ্তর থেকে প্রাপ্ত সহযোগিতা
  • ব্যক্তিগত অনুদান গ্রহন
  • রোগীদের সেবা প্রদানের মাধ্যমে রোগীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থ

রোগীদের স্বাস্থ্য সেবা গ্রহনের জন্য সিরিয়াল সংরক্ষন এবং রোগীর করনীয় :

  • সকল রোগীকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের নিয়মনীতি মেনে চলতে হবে সেই সাথে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সিরিয়াল লক্ষ্য রাখতে হবে।
  • রোগী বা রোগীর কোন লোক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কোন আসবাব পত্র অথবা অন্যকোন কিছুর ক্ষতি করলে ঐ রোগী ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবে।
  • রোগীর কোন অভিযোগ থাকলে কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে রোগী/রোগীর লোকজন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করতে পারবে না।
  • স্বাস্থ্য কেন্দ্রে একজন রোগীর সাথে একের অধিক ব্যক্তি থাকতে পারবে না।
  • রোগী/রোগীর লোকজনকে ক্লিনিক পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য চেষ্টা রাখতে হবে।
  • রোগীকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অথবা তাঁর নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে রোগীর লোকজন পরিবহনের ব্যবস্থা করবে এজন্য অফিস কোন দায় দায়িত্ব নেবে না।
  • রোগীকে স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে যে টোকেন দেওয়া হবে তা নিজ দায়িত্বে সংরক্ষন করতে হবে।
  • স্বাস্থ্যকেন্দ্রের স্বাস্থ্য সেবা বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কোন ব্যক্তির বিরদে¦ বা কোন ডাক্তারের বিরুদ্বে কোন প্রকার অভিযোগ থাকলে তা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে।
  • যে কোন অভিযোগ প্রাপ্তির পর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্তৃপক্ষ ৭ (সাত ) কার্যদিবসের মধ্যে তার সুষ্ঠ ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।

যে সকল চিকিৎসকগন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগী দেখবেন :

  • মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
  • শিশু ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ
  • জেনারেল ও লেপারোস্কিসার্জন
  • স্ত্রী ও প্রসুতী (গাইনী) বিশেষজ্ঞ
  • চক্ষু বিশেষজ্ঞ
  • স্ইাকোথেরাপিষ্ট
  • হাঁপানি রোগ বিশেষজ্ঞ

ফিজিওথেরাপি:-

  • যে সকল রোগের ফিজিওথেরাপি দেওয়া হয়।
  • মাজা ব্যাথা, ঘাড়ে ব্যাথা, হাটুতে ব্যাথা, কোমরে ব্যাথা, বাতের ব্যাথা, কাঁধে ব্যাথা, পায়ের গোড়লিতে ব্যাথা, মাজার হাড় ক্ষয় ও বৃদ্ধি রোগ, হাত পা অবশ ও ঝিন ঝিন করা , প্যারালাইসিস,ফ্রোজেন সোল্ডার(কাধ শক্ত হয়ে যাওয়া, সায়াটিকা(কোমর থেকে গোড়ালি পর্যন্ত ব্যাথা) বাচ্চাদের হাটতে অসুবিধা , খেলাধুলায় আঘাত জনিত ব্যাথা, অর্স্টি আথ্রাইটিসজিবিএস বেলস পলসি(মুখ বেঁকে যাওয়া) রিউমাটয়েড আথ্রাইটিস লাম্বার স্পন্ডাই লোসি, সারভাইক্যাল স্পন্ডাই লোসি।

রোগী দেখার সময়:-

  • প্রতি মাসের ১ম শুক্রবার ও ৩য় শুক্রবার (মমতা মা, শিশু স্বাস্থ্য ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র)।
  • প্রতি মাসের ২য় এবং ৪র্থ শুক্রবার (মুক্তি নারী ও শিশু উন্নয়ন সংস্থা ২২/১ তিতুমির সড়ক, থানাপাড়া, কুষ্টিয়া জিকে রেষ্ট হাউজ এর পিছনে ছয় তলা বিল্ডিং)

এ্যাজমা রোগের চিকিৎসা :- (প্রতি শনিবার)

পরিবার পরিকল্পনার সেবা সমূহ :

  • স্থায়ী পদ্বতিঃ- লাইগেশন, এন.এস.ভি
  • অস্থায়ী পদ্বতিঃ- স্বল্প মেয়াদী- কনডম, খাবার বড়ি, ইনজেকশন
  • দীর্ঘ মেয়াদীঃ- ইমপ্লান্ট, আই,ইউ.ডি
  • অনান্য রোগের সেবা গ্রহনের সময়— শনিবার থেকে বৃহষ্পতিবার


রোগীর পরীক্ষা নিরীক্ষার দায়িত্ব :

রোগী নিজ দায়িত্বে পরীক্ষা নিরীক্ষা করাবেন সেটা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে অথবা বাহিরে যেখানেই/হোক তবে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পরীক্ষা নিরীক্ষার কার্যক্রম শুরুহলে রোগীর গ্রেড অনুযায়ী ৩০%/৪০% কম মূল্যে (সংস্থার নির্বাহীর অনুমোদন ক্রমে) পরীক্ষা নিরীক্ষার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

হাসপাতালের বর্জ অপসারনে করনীয় :

মূলত হাসপাতালের বর্জ অপসারনে পৌরসভার সহায়তা নেয়া যেতে পারে দ্বিতীয় বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে বর্জগুলিকে রিংস্লাব দিয়ে চাক করে তার মধ্যে অথবা পুরিয়ে ফেলা যেতে পারে।

পারিবারিক হেলথ কার্ড :

পারিবারিক হেলথ কার্ডের মূল্য ২০টাকা হবে। একজন রোগীর জন্য একটি কার্ড নির্দিষ্ট থাকবে। এই কার্ডের মেয়াদ থাকবে ৯০ দিন বা ৩ মাস, ৩ মাস পরে পুনরায় ঐ কার্ডটি নবায়ন করতে হবে ২০/- টাকা দিয়ে।

১.১ সম্পদ সংগ্রহ: মুক্তি নারী ও শিশু উন্নয়ন সংস্থার লক্ষ্য একটি সুন্দর সমাজ যা অর্থনৈতিক ভাবে সাম্য, সামাজিক ভাবে নিরপেক্ষ, পরিবেশগত ভাবে নিরাপদ গণতান্ত্রিক ভাবে কার্যকর যেখানে পুরুষ ও মহিলা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ন্যায্যতার ভিত্তিতে সমান অধিকার ভোগ করে। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে সংস্থা দু:স্থ অসহায়, দারিদ্র পীড়িত মানুষের বিশেষত: নারী ও শিশুদের আইনগত সহায়তা প্রদান সহ মানবাধিকার সংরক্ষণ ও সু-শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে। সেই সাথে মমতা মা শিশু ও স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিচালনা করছে। এই কার্যক্রমকে সফল ভাবে বাস্তবায়নের জন্য, সংস্থা যে কোন দেশী, বিদেশী দাতা সংস্থা, স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, এমনকি ব্যক্তিগত অনুদান, সাহায্য সহযোগিতা গ্রহণ পূর্বক অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে পাশাপাশি যে কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে নৈতিক ভাবে সংস্থার স্বার্থে এবং উপকার ভোগীদের উন্নয়ন ও কল্যাণমূলক কাজে ঋণ গ্রহণ ও ঋণ গ্রহণ চুক্তি সম্পাদন করতে পারবে। পাশাপাশি সংস্থার নিজস্ব সম্পদের যথাযথ উৎপাদনমুখী ব্যবহারের মাধ্যমে যেমন- জমি থেকে প্রাপ্ত অর্থ, ট্রেনিং ভেন্যু, ডরমেটরী, ক্যানটিন, মৎস চাষ ইত্যাদি এছাড়াও ক্ষুদ্র ঋণ কর্তৃক প্রাপ্ত সার্ভিস চার্জ ও অন্যান্য খাত থেকে প্রাপ্ত অর্থ মমতা মা শিশু ও স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উন্নয়নে সংগ্রহ ও ব্যবহার করবে।

হাসপাতাল বেড কোন ব্যক্তির নামে নামকরনঃ কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান মমতা মা শিশু স্বাস্থ্য ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ২ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা অনুদান দিলে অনুদান প্রদানকৃত ব্যক্তির/প্রতিষ্টানের নামে ১টা বেডের নামকরণ করা হবে।

আর্থিক ব্যবস্থাপনা : আর্থিক ব্যবস্থাপনার জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠিত হবে। ১ জন তমধ্যে হিসাব ব্যবস্থাপক হিসাবে সমুদয় আর্থিক লেনদেন সংরক্ষণ ও পরিচালনা করবেন। মাস শেষে সকল প্রকার হিসাবের প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র সহ আহবায়কের নিকট দাখিল করবেন।
রোগির সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সকল প্রকার ঔষধ হাসপাতালে সরবরাহের ব্যবস্থা থাকবে। জনগনের স্বচ্ছলতার উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা সেবা গ্রহণকারীদের ৪টি ধাপে বিভক্ত করা হবে। সে ক্ষেত্রে

  • পূর্ণ স্বচ্ছল ব্যক্তি বা পরিবার পাইকারী দাম দেবে
  • অস্বচ্ছল ব্যক্তি বা পরিবার ৭৫% মূল্য দেবে
  • পরের ক্যাটাগরি ৫০% মূল্য দেবে
  • একেবারে গরীব নিঃস্ব ব্যক্তি বা পরিবার ০% মূল্য দেবে। তবে এ ক্ষেত্রে নির্বাহী পরিচালকের অনুমতি প্রয়োজন হবে

ক্যাটাগরি চেনার জন্য বিভিন্ন রঙের কার্ড করতে হবে:

  • বার্ষিক পারিবারিক হেলথ কার্ড এদের ডাক্তার দেখান ফি। (এটা ৫০/- থেকে ১০০/-) টাকা
    বার্ষিক পারিবারিক হেলথ কার্ড-এর বিধান থাকতে পারে যেখানে একটি পরিবার বাৎসরিক ৫০/- বা ১০০/- টাকা (যা নির্ধারিত হয়) ফি প্রদান করে এই কার্ড সংগ্রহ করতে পারবে। এই কার্ডে পরিবারের সকল সদস্যদের নাম উলে­খ থাকবে। কার্ডে উলে­খিত যে কোন সদস্য ক্লিনিক বা হাসপাতালে বিনা পয়সায় ডাক্তার দেখাতে পারবে। এই কার্ড বাৎসরিক ভিত্তিতে নবায়ন করা যাবে।
  • টিকেট পাওয়া যাবে। যতবার যাবে প্রতিবারে ১০/- থেকে ১৫/- টাকা লাগবে।
    এছাড়া হাসপাতালে টিকেট করার ব্যবস্থা থাকতে পারে। যে সমস্ত পরিবার হেলথ কার্ড করবে না তারা হাসপাতালে টিকেট কেটে ডাক্তার দেখাতে পারবে। প্রতিবার ডাক্তার দেখাতে টিকেট কাটতে হবে যার মূল্য প্রতিবারে ১০/- থেকে ১৫/- টাকা (যা নির্ধারিত হয়)।

উপরোক্ত পদ্ধতিতে ক্লিনিক ম্যানেজমেন্ট কমিটি বিষয়টির শ্রেণীবিভাগ করবে। নিরাপদ ডেলিভারির জন্য ন্যূনতম খরচ ৩০০/- টাকা ধার্য করা হয়। কার্ড হোল্ডারগণ ডেলিভারির জন্য ফি দেবেন, কার্ড না থাকলে তিনি কত ফি দেবেন, বাইরের রোগীর চার্জ নির্ধারণ কত হবে, বাইরের লোক কি খরচ প্রদান করবে, তা ক্লিনিক ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করবে।

মুক্তি নারী ও শিশু উন্নয়ন সংস্থার কর্তৃপক্ষ মমতা মা, শিশু স্বাস্থ্য ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সামগ্রীক ব্যবস্থাপনার এবং নীতি মালার প্রয়োজনে ও বিশেষ জরুরী অবস্থায় পরিমার্জন, পরিবর্ধন করতে পারবেন।

Shelter Home Maintenance Policy
of
MUKTI NARI-O-SHISHU UNNAYAN SANGASTHA (MNSUS)

মমতা মা, শিশু স্বাস্থ্য ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

 

নীতিমালা

ভূমিকা

বাংলাদেশ দরিদ্রতম দেশ। এ দেশের ৭৫% মানুষ দরিদ্র বিধায় তাদের জীবন যাত্রার মানও অনুন্নত পাশাপাশি নিরক্ষরতা এবং অসচেতনতা দরিদ্র মানুষকে মানবেতর জীবন যাপনে বাধ্য করছে। মুক্তি নারী ও শিশু উন্নয়ন সংস্থা, এই দরিদ্র, অসহায়, নির্যাতিত মানুষের উন্নয়ন ও আত্ম-নির্ভরশীলতা এবং আত্ম-কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র বিমোচন, স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করণ এবং মানবাধিকার সংরক্ষণের লক্ষ্যে (১৯৯০) সাল প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে কাজ করে যাচ্ছে।

সংস্থার লক্ষ্য

একটি সুন্দর সমাজ যা অর্থনৈতিক ভাবে সাম্য, সামাজিক ভাবে নিরপেক্ষ, পরিবেশগত ভাবে নিরাপদ, গণতান্ত্রিকভাবে কার্যকর, যেখানে পুরুষ ও মহিলা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ন্যায্যতার ভিত্তিতে সমান অধিকার ভোগ করে।


সংস্থার উদ্দেশ্য

ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, ও লিঙ্গ বৈষম ভেদে দেশের সকল হতদরিদ্র, দরিদ্র, দু:স্থ্য, নির্যাতিত, আইনী সহায়তা থেকে বঞ্চিত নিরক্ষর জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, মানবাধিকার সংরক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়নে সহায়তা করাই এই সংস্থার অন্যতম উদ্দ্যেশ্য। এই সংস্থা একটি অরাজনৈতিক এবং অলাভজনক সমাজসেবা মূলক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান হিসাবে কাজ করবে।

সংগঠনের বৈশিষ্ট্য সমূহ

  • নারী পুরুষের সমতা।
  • নারী পুরুষ একে অন্যের প্রতি বিশ্বস্ত ও শ্রদ্ধাশীল।
  • নারী কর্মীদের কোন প্রকার আচরণ দ্বারা আঘাত করা যাবে না। এরকম কাজ শাস্তি যোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
  • সংস্থায় নারীর জন্য আলাদা কোন কাজ চিহ্নিত করা যাবে না।
  • ধর্ম, বর্ণ, গোত্র ও লিঙ্গ বৈষম্যভেদে সকলের সমানাধিকারের বিশ্বাস।
  • পিতৃতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি দূরীকরনে সংস্থার সকল কর্মসূচীতে অঙ্গীকার।
  • অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি পোষন করা।
  • সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারী-পুরুষ এর সমতা নিশ্চিত করা।
  • নারীদের প্রতি আস্থা।
  • আদিবাসী, প্রতিবন্ধী, বেঁদে, হিজড়াসহ সকল প্রান্তিক জনগোষ্টিকে উন্নয়নের মূলস্রোতে আনার অঙ্গীকার।
  • দেশপ্রেম।
  • সততা, ন্যায়নিষ্টতা, শৃংঙ্খলা বজায় রাখা ও আস্থাশীল।
  • সেবাদানে অঙ্গিকারবদ্ধ।

মুক্তির প্রতিষ্ঠাতা জনাব মমতাজ আরা বেগম তার কর্মময় জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছেন, বাংলাদেশের এই দরিদ্র মানুষেরা তাদের সমস্যা ও উন্নয়ন চাহিদা সম্পর্কে পুরোপুরি সচেতন নয়। গ্রামে স্বাস্থ্য সুবিধা বিশেষ করে নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অপ্রতুল, তাছাড়া কুষ্টিয়া জেলায় স্বাস্থ্য সেবা প্রাপ্তির সুযোগ সুবিধাও কম। যা কিছু ক্লিনিক গড়ে উঠেছে সব শহর ভিত্তিক। থানা ও গ্রাম ভিত্তিক স্বাস্থ্য সেবা সুবিধা নাই বললেই চলে। এসব দিক বিবেচনা করে মুক্তি নারী ও শিশু উন্নয়ন সংস্থা, কুষ্টিয়া জেলার অবহেলিত জনপদ মীরপুর উপজেলার বারুইপাড়া ইউনিয়নের তাঁতীবন্ধ গ্রামে দুস্থ অসহায় স্বাস্থ্য বঞ্চিত বিশেষ করে প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত নারীদের সু-চিকিৎসা প্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মমতা মা শিশু ও স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নিজ জমির উপর স্থাপন করেছে।

বর্তমান বিশ্ব জনসংখ্যা প্রায় ৬০০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। প্রায় এক পঞ্চমাংশ অর্থাৎ একশো কোটিরও বেশী জনসংখ্যা কিশোর-কিশোরী জনগোষ্টির সমাবেশ এর আগে কখনো দেখা যায়নি। 

আজকের এই বিপুল সংখ্যক তরুণ-তরুণী, মানব-মানবীই আগামী শতাব্দির পরিবার, দেশ ও জাতির কর্ণধার। একটি জাতির সঠিক কল্যাণ ও সমৃদ্ধি নির্ভর করে স্বাস্থ্যবান ও শৃংখলা পরায়ন তরুণ ও যুব সমাজের উপর। সুতরাং এই সম্ভাবনাময় তরুণ বয়সীদের প্রজনন স্বাস্থ্যের পরিচর্যা সারা জীবনের সুস্থতা ও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা অপরিহার্য। অথচ এই সম্ভাবনাময় তরুণ-তরুণীদের প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়টি এতদিন ছিল উপেক্ষিত। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলো তরুণী বয়সীদের প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে অসচেতনতা ও অবহেলার চিত্রটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এসব দেশে মা ও শিশুর উচ্চ মৃত্যুহার, মা ও শিশুর দীর্ঘকালীন রুগ্নতা, অনাকাঙ্খিত ঝুকিপূর্ণ গর্ভধারণ এবং প্রজননতন্ত্রের সংক্রমণের হার অনেক বেশী। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, প্রজনন তন্ত্র বিশেষ করে তরুণী বয়সীদের প্রজনন স্বাস্থ্য পরিচর্যার প্রতি উদাসীনতা।

প্রজনন স্বাস্থ্য মূলত সামগ্রিক স্বাস্থ্যের একটি অংশ। সুনির্দিষ্ট ভাবে বলা যায় যে, প্রজনন স্বাস্থ্য হলো প্রজনন তন্ত্রের স্বাস্থ্য, আর সন্তান জন্মদানের জন্য জড়িত মানব দেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ মিলেই প্রজনন তন্ত্র।

জনসংখ্যা উন্নয়ন বিষয়ক আর্ন্তজাতিক সম্মেলনে গৃহিত সংজ্ঞা অনুযায়ী, প্রজনন স্বাস্থ্য বলতে বুঝায় পরিপূর্ণ দৈহিক, মানসিক এবং সামাজিক কল্যাণের একটি অবস্থা।

বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ, এদেশের ৬৫% লোকই দারিদ্র সীমার নিচে বাস করে, ৭৫% লোকই দরিদ্র। যেখানে সকল জনগোষ্ঠির স্বাস্থ্য সুরক্ষা রাখার অন্তরায় সেখানে প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়টি ভয়ানক ভাবে উপেক্ষিত। কারণ হিসাবে বলা যায় আমাদের দেশে শিক্ষার হার অত্যন্ত কম। এদেশে নিরক্ষরতার হার অত্যধিক, পাশাপাশি ধর্মীয় গোড়ামী, কুসংস্কার, প্রচলিত অন্ধ বিশ্বাস, আমাদের লজ্জা জনিত দুর্বলতা প্রজনন স্বাস্থ্য সংরক্ষণে সাংঘাতিক অন্তরায়।

এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে বিবাহিত দম্পতির মধ্যে শতকরা ৪৭ ভাগ মহিলাই ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী। এদের মধ্যে শতকরা ৩৩ ভাগ মহিলাই ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সের মধ্যেই মা হয়।
বাংলাদেশে ১৫-১৯ বছর বয়সীদের মধ্যে প্রজননহার বিশ্বের সর্বাপেক্ষা।

  • মায়ের বয়স ১৮ বছরের নীচে হওয়ায় বাংলাদেশের শতকরা ১৯ ভাগ জন্মই ঝুকিপূর্ণ।
  • বাংলাদেশে মাতৃ মৃত্যুহার প্রতিহাজার জন্মে ৪ এর উপর। কম বয়সী মায়েদের মৃত্যুহার ৫.৮ ভাগ।
  • তরুনী মায়েদের শিশু মৃত্যুহার প্রতিহাজার জীবিত জন্মে ৮৫ জন।
  • বেশীর ভাগই প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা পায় না, বিধায় পারিবারিক বিরোধ ও দাম্পত্য বিচ্ছেদ উদ্বেগজনক।
  • শতকরা ৫০ ভাগ মহিলা/কিশোরী প্রজননতন্ত্রের সংক্রামনে আক্রান্ত।

মুক্তি নারী ও শিশু উন্নয়ন সংস্থা, কুষ্টিয়া ১৯৯০ সাল থেকে তার কার্যক্রমের শুরু থেকেই সমাজ ও দেশের এই সম্ভাবনাময় আগামী দিনের জাতীর ভবিষ্যত সেবকদের প্রজনন স্বাস্থ্য পরিচর্যার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় এনে কাজ করে যাচ্ছে। যার ফলে ইতিমধ্যেই নিজ চেষ্টায় এবং দাতা সংস্থার সহযোগিতায় ৮৭টি কিশোরী বিদ্যালয়ের মাধ্যমে (৪৭x৩০) = ১৪১০ জন নিরক্ষর কিশোরীকে সাক্ষর দানের পাশাপাশি প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। বর্তমানে আরও ১০টি বিদ্যালয় পরিচালনা করে যাচ্ছে। এছাড়াও ২২জন কর্মীর মাধ্যমে শহর অঞ্চলের, বস্তিতে গ্রামের অসচেতন জনগোষ্ঠির কাছে যেয়ে উঠান বৈঠক, দলীয় বৈঠকের মাধ্যমে প্রজনন স্বাস্থ্য শিক্ষা বিষয়টি তুলে ধরেছে। সেই সাথে সংস্থা মীরপুর উপজেলার তাঁতীবন্ধ গ্রামে মুক্তি মমতা মা শিশু ও স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মানের মাধ্যমে একদিকে যেমন স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার মহান ব্রত নিয়ে কাজ করছে পাশাপাশি দক্ষ মানব সম্পদ তৈরী করে চলেছে।

মুক্তি বিশ্বাস করে স্বাস্থ্য সুরক্ষার অধিকার মানুষের মৌলিক ও মানবিক অধিকার। প্রজনন স্বাস্থ্য, স্বাস্থ্য রক্ষারই অংশ।

স্বাস্থ্য মানুষের মৌলিক অধিকার। স্বাস্থ্য সেবা সেই অধিকারের সোপান, সেখানে অধিকারের প্রশ্ন আছে সেখানে মানুষের কর্তব্যের বা অংশগ্রহণের বিষয়টি সম্পৃক্ত আমরা স্বাস্থ্য ভাল রাখব বললেইতো স্বাস্থ্য ভাল হয়ে যাবেনা। এজন্য প্রয়োজন স্বাস্থ্য অভ্যাস পালন ও কঠোর অনুশীলন। স্বাস্থ্য অর্জনে আমাদের দেশে বেশ কতগুলো বাধা দেখা যায় যেমন- বিভিন্ন প্রকারের সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব অধিক সংখ্যায় মা ও শিশুর মৃত্যু, শিশুর অভাব, জনসংখ্যা বৃদ্ধি গ্রামাঞ্চলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অপ্রতুলতা এবং সামাজিক কুসংস্কার ইত্যাদি। সাধারণ মানুষকে এসব বিষয়ে সজাগ করে তোলার জন্য স্বাস্থ্য পরিচর্যা সম্পর্কে জ্ঞানদান করা আবশ্যক।
সকল অন্ধ আচ্ছন্নতা কাটিয়ে, লাজ-লজ্জা দুর করে আমাদের সকলের প্রজনন স্বাস্থ্য সুরক্ষা করা আজকে নৈতিক দায়িত্ব ও মানবাধিকারের কাজ।
মুক্তি নারী ও শিশু উন্নয়ন সংস্থা মীরপুর উপজেলার বারুইপাড়া ইউনিয়নের তাঁতীবন্ধ গ্রামে মমতা মা, শিশু স্বাস্থ্য ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি হতদরিদ্র,দরিদ্র সাধারন মানুষরা যাতে খুব সহজে,সহজলভ্য ভাবে কোন প্রকার হয়রানি ব্যতিরেকে স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে পারে সে জন্য স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি ৭ (সাত) সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি দ্বারা পরিচালিত হবে। যেখানে মুক্তি সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক পদাধীকার বলে আহবায়ক/ সভাপতি থাকবেন। সংস্থার সিনিয়র ম্যানেজম্যান্ট টিমের মধ্যে থেকে বাকি সদস্যদের অর্ন্তভুক্ত করা হবে। এ ছাড়াও এলাকার সাধারন জনগনের অংশগ্রহন নিশ্চিত করার জন্য তাদের মধ্যে থেকেও যারা সামাজিক কাজের সাথে জড়িত থাকবেন তাদেরকে কমিটির সদস্য হিসাবে অর্ন্তভ’ক্ত করা হবে তবে এক্ষেত্রে এলাকা থেকে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব আসলে সাধারন পরিষদে/নির্বাহী পরিষদে আলোচনার মাধ্যমে অনুমতি গ্রহন করে সদস্য নির্বাচন করা যাবে। কমিটি নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্থানীয় ভাবে দুই জনকে রাখা বাধ্যতা মূলক বলে পরিগণিত হবে।

স্বাস্থ্য পরিচর্যার ৮টি উপাদান :

  • স্বাস্থ্য শিক্ষা (স্বাস্থ্য সম্বন্ধীয় সমস্যাগুলির নিবারন ও নিয়ন্ত্রন শিক্ষা)
  • মা ও শিশুর যত্ন এবং পরিবার পরিকল্পনা
  • প্রয়োজনীয় পুষ্ঠিসহ পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ
  • সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
  • আঞ্চলিক রোগ নিয়ন্ত্রন ও নিবারন
  • সাধারন ব্যাধী ও জখমের চিকিৎসা
  • অত্যাবশকীয় ঔষধের ব্যবস্থা
  • প্রয়োজনীয় অপারেশন নিশ্চিত করা

মমতা মা ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে কোন ধরনের রোগী স্বাস্থ্যসেবা পাবে ?
এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ধনী, দরিদ্র, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষ স্বাস্থ্য সেবা পাবেন। তবে এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যে সমস্ত রোগী আসবে তাঁদের আয়ের উৎস বিবেচনা করে তিনটি শ্রেণীতে বা গ্রেডে ভাগ করা যাবে। যথা-

  • গ্রেড A ধনী বা স্বচ্ছল (আয়ের উৎস ভাল) যাদের মাসিক আয় ৩৫০০০টাকা বা তদুর্দ্ধ
  • গ্রেড B মধ্যবিত্ত (আয়ের উৎস মোটামুটি ভাল) যাদের মাসিক আয় ২০,০০০টাকা থেকে ৩৪৯৯৯ টাকা
  • গ্রেড C দরিদ্র (আয়ের উৎস কম) যাদের আয় ১৫০০০ টাকা থেকে ১৯৯৯৯ টাকা
  • গ্রেড D হতদরিদ্র (আয়ের উৎস খুবই কম) যাদের মাসিক আয় ২০০০০টাকার নীচে

রোগীর ব্যায়ের ধরন :

গ্রেড A ধনী বা স্বচ্ছল (আয়ের উৎস ভাল) :
এই ধরনের রোগীদের,ক্লিনিক/হাসপাতালের রুগীদের স্বাস্থ্য সেবা গ্রহনের জন্য সমস্ত রকমের চিকিৎসা ব্যায়ভার বহন করতে হবে। অর্থাৎ প্রাইভেট ক্লিনিকগুলিতে রোগীদের জন্য যে পরিমান অর্থব্যায় করতে হয় এখানে ও সেই পরিমান অর্থ ব্যায় করতে হবে। চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য ক্লিনিক পরিচালিত কমিটি সেবার আর্থিক মূল্য নির্ধারন করবেন।

গ্রেড B মধ্যবিত্ত (আয়ের উৎস মোটামুটি ভাল) :
A এবং B গ্রেডের রোগীদের একই ধরনের চিকিৎসা সেবা দেয়া যেতে পারে। তবে বিশেষ ভাবে আর্থিক দিক বিবেচনা করে সেবা গ্রহীতার কাছ থেকে সেবার আর্থিক মূল্য কম নেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে নির্বাহী পরিচালকের অনুমতি গ্রহন করতে হবে।

গ্রেড C দরিদ্র (আয়ের উৎস কম) :
এই ধরনের রোগীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসা ব্যায় যা হবে (সংস্থার নির্বাহীর নির্দেশ ক্রমে) সেই অর্থের ৩০% থেকে ৪০% ব্যায় কম নেয়া যেতে পারে।

গ্রেড D হতদরিদ্র (আয়ের উৎস খুবই কম) :
যে সমস্ত রোগীর অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ তাঁদের ক্ষেত্রে (সংস্থার নির্বাহীর অনুমোদন ক্রমে) চিকিৎসাব্যায় বাবদ যাবতীয় খরচের ৫০% কমে গ্রহন করা হবে। অপারেশনের ক্ষেত্রে ডাক্তারের ফি এর ক্ষেত্রে বিষয়টি প্রযোজ্য হবে।

চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য আয়ের উৎসসমূহ :

  • চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য ক্লিনিকের রক্ষনাবেক্ষন,সরঞ্জামাদি,ঔষধপত্র এবং কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন ভাতা বেবদ অর্থের প্রয়োজন, সেই অর্থ সংগ্রহের জন্য ক্লিনিক ব্যবস্থাপনা কমিটি নি¤œ বর্নিত উপায়ে অর্থ/তহবিল সংগ্রহ করবেন।

তহবিল সংগ্রহের ধরন :

  • স্থানীয় দাতাদের অনুদান
  • যে সমস্ত সংস্থা স্বাস্থ্য সেবা দিচ্ছে তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত আর্থিক এবং উপকরন প্রাপ্তি সহযোগিতা গ্রহন
  • বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের সহায়তা গ্রহন
  • উপজেলা/ইউনিয়ন পরিষদের সহায়তা নেওয়া যেতে পারে
  • সরকারি দপ্তর থেকে প্রাপ্ত সহযোগিতা
  • ব্যক্তিগত অনুদান গ্রহন
  • রোগীদের সেবা প্রদানের মাধ্যমে রোগীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থ

রোগীদের স্বাস্থ্য সেবা গ্রহনের জন্য সিরিয়াল সংরক্ষন এবং রোগীর করনীয় :

  • সকল রোগীকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের নিয়মনীতি মেনে চলতে হবে সেই সাথে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সিরিয়াল লক্ষ্য রাখতে হবে।
  • রোগী বা রোগীর কোন লোক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কোন আসবাব পত্র অথবা অন্যকোন কিছুর ক্ষতি করলে ঐ রোগী ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবে।
  • রোগীর কোন অভিযোগ থাকলে কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে রোগী/রোগীর লোকজন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করতে পারবে না।
  • স্বাস্থ্য কেন্দ্রে একজন রোগীর সাথে একের অধিক ব্যক্তি থাকতে পারবে না।
  • রোগী/রোগীর লোকজনকে ক্লিনিক পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য চেষ্টা রাখতে হবে।
  • রোগীকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অথবা তাঁর নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে রোগীর লোকজন পরিবহনের ব্যবস্থা করবে এজন্য অফিস কোন দায় দায়িত্ব নেবে না।
  • রোগীকে স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে যে টোকেন দেওয়া হবে তা নিজ দায়িত্বে সংরক্ষন করতে হবে।
  • স্বাস্থ্যকেন্দ্রের স্বাস্থ্য সেবা বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কোন ব্যক্তির বিরদে¦ বা কোন ডাক্তারের বিরুদ্বে কোন প্রকার অভিযোগ থাকলে তা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে।
  • যে কোন অভিযোগ প্রাপ্তির পর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্তৃপক্ষ ৭ (সাত ) কার্যদিবসের মধ্যে তার সুষ্ঠ ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।

যে সকল চিকিৎসকগন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগী দেখবেন :

  • মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
  • শিশু ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ
  • জেনারেল ও লেপারোস্কিসার্জন
  • স্ত্রী ও প্রসুতী (গাইনী) বিশেষজ্ঞ
  • চক্ষু বিশেষজ্ঞ
  • স্ইাকোথেরাপিষ্ট
  • হাঁপানি রোগ বিশেষজ্ঞ

ফিজিওথেরাপি:-

  • যে সকল রোগের ফিজিওথেরাপি দেওয়া হয়।
  • মাজা ব্যাথা, ঘাড়ে ব্যাথা, হাটুতে ব্যাথা, কোমরে ব্যাথা, বাতের ব্যাথা, কাঁধে ব্যাথা, পায়ের গোড়লিতে ব্যাথা, মাজার হাড় ক্ষয় ও বৃদ্ধি রোগ, হাত পা অবশ ও ঝিন ঝিন করা , প্যারালাইসিস,ফ্রোজেন সোল্ডার(কাধ শক্ত হয়ে যাওয়া, সায়াটিকা(কোমর থেকে গোড়ালি পর্যন্ত ব্যাথা) বাচ্চাদের হাটতে অসুবিধা , খেলাধুলায় আঘাত জনিত ব্যাথা, অর্স্টি আথ্রাইটিসজিবিএস বেলস পলসি(মুখ বেঁকে যাওয়া) রিউমাটয়েড আথ্রাইটিস লাম্বার স্পন্ডাই লোসি, সারভাইক্যাল স্পন্ডাই লোসি।

রোগী দেখার সময়:-

  • প্রতি মাসের ১ম শুক্রবার ও ৩য় শুক্রবার (মমতা মা, শিশু স্বাস্থ্য ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র)।
  • প্রতি মাসের ২য় এবং ৪র্থ শুক্রবার (মুক্তি নারী ও শিশু উন্নয়ন সংস্থা ২২/১ তিতুমির সড়ক, থানাপাড়া, কুষ্টিয়া জিকে রেষ্ট হাউজ এর পিছনে ছয় তলা বিল্ডিং)

এ্যাজমা রোগের চিকিৎসা :- (প্রতি শনিবার)

পরিবার পরিকল্পনার সেবা সমূহ :

  • স্থায়ী পদ্বতিঃ- লাইগেশন, এন.এস.ভি
  • অস্থায়ী পদ্বতিঃ- স্বল্প মেয়াদী- কনডম, খাবার বড়ি, ইনজেকশন
  • দীর্ঘ মেয়াদীঃ- ইমপ্লান্ট, আই,ইউ.ডি
  • অনান্য রোগের সেবা গ্রহনের সময়— শনিবার থেকে বৃহষ্পতিবার


রোগীর পরীক্ষা নিরীক্ষার দায়িত্ব :

রোগী নিজ দায়িত্বে পরীক্ষা নিরীক্ষা করাবেন সেটা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে অথবা বাহিরে যেখানেই/হোক তবে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পরীক্ষা নিরীক্ষার কার্যক্রম শুরুহলে রোগীর গ্রেড অনুযায়ী ৩০%/৪০% কম মূল্যে (সংস্থার নির্বাহীর অনুমোদন ক্রমে) পরীক্ষা নিরীক্ষার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

হাসপাতালের বর্জ অপসারনে করনীয় :

মূলত হাসপাতালের বর্জ অপসারনে পৌরসভার সহায়তা নেয়া যেতে পারে দ্বিতীয় বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে বর্জগুলিকে রিংস্লাব দিয়ে চাক করে তার মধ্যে অথবা পুরিয়ে ফেলা যেতে পারে।

পারিবারিক হেলথ কার্ড :

পারিবারিক হেলথ কার্ডের মূল্য ২০টাকা হবে। একজন রোগীর জন্য একটি কার্ড নির্দিষ্ট থাকবে। এই কার্ডের মেয়াদ থাকবে ৯০ দিন বা ৩ মাস, ৩ মাস পরে পুনরায় ঐ কার্ডটি নবায়ন করতে হবে ২০/- টাকা দিয়ে।

১.১ সম্পদ সংগ্রহ: মুক্তি নারী ও শিশু উন্নয়ন সংস্থার লক্ষ্য একটি সুন্দর সমাজ যা অর্থনৈতিক ভাবে সাম্য, সামাজিক ভাবে নিরপেক্ষ, পরিবেশগত ভাবে নিরাপদ গণতান্ত্রিক ভাবে কার্যকর যেখানে পুরুষ ও মহিলা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ন্যায্যতার ভিত্তিতে সমান অধিকার ভোগ করে। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে সংস্থা দু:স্থ অসহায়, দারিদ্র পীড়িত মানুষের বিশেষত: নারী ও শিশুদের আইনগত সহায়তা প্রদান সহ মানবাধিকার সংরক্ষণ ও সু-শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে। সেই সাথে মমতা মা শিশু ও স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিচালনা করছে। এই কার্যক্রমকে সফল ভাবে বাস্তবায়নের জন্য, সংস্থা যে কোন দেশী, বিদেশী দাতা সংস্থা, স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, এমনকি ব্যক্তিগত অনুদান, সাহায্য সহযোগিতা গ্রহণ পূর্বক অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে পাশাপাশি যে কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে নৈতিক ভাবে সংস্থার স্বার্থে এবং উপকার ভোগীদের উন্নয়ন ও কল্যাণমূলক কাজে ঋণ গ্রহণ ও ঋণ গ্রহণ চুক্তি সম্পাদন করতে পারবে। পাশাপাশি সংস্থার নিজস্ব সম্পদের যথাযথ উৎপাদনমুখী ব্যবহারের মাধ্যমে যেমন- জমি থেকে প্রাপ্ত অর্থ, ট্রেনিং ভেন্যু, ডরমেটরী, ক্যানটিন, মৎস চাষ ইত্যাদি এছাড়াও ক্ষুদ্র ঋণ কর্তৃক প্রাপ্ত সার্ভিস চার্জ ও অন্যান্য খাত থেকে প্রাপ্ত অর্থ মমতা মা শিশু ও স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উন্নয়নে সংগ্রহ ও ব্যবহার করবে।

হাসপাতাল বেড কোন ব্যক্তির নামে নামকরনঃ কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান মমতা মা শিশু স্বাস্থ্য ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ২ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা অনুদান দিলে অনুদান প্রদানকৃত ব্যক্তির/প্রতিষ্টানের নামে ১টা বেডের নামকরণ করা হবে।

আর্থিক ব্যবস্থাপনা : আর্থিক ব্যবস্থাপনার জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠিত হবে। ১ জন তমধ্যে হিসাব ব্যবস্থাপক হিসাবে সমুদয় আর্থিক লেনদেন সংরক্ষণ ও পরিচালনা করবেন। মাস শেষে সকল প্রকার হিসাবের প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র সহ আহবায়কের নিকট দাখিল করবেন।
রোগির সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সকল প্রকার ঔষধ হাসপাতালে সরবরাহের ব্যবস্থা থাকবে। জনগনের স্বচ্ছলতার উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা সেবা গ্রহণকারীদের ৪টি ধাপে বিভক্ত করা হবে। সে ক্ষেত্রে

  • পূর্ণ স্বচ্ছল ব্যক্তি বা পরিবার পাইকারী দাম দেবে
  • অস্বচ্ছল ব্যক্তি বা পরিবার ৭৫% মূল্য দেবে
  • পরের ক্যাটাগরি ৫০% মূল্য দেবে
  • একেবারে গরীব নিঃস্ব ব্যক্তি বা পরিবার ০% মূল্য দেবে। তবে এ ক্ষেত্রে নির্বাহী পরিচালকের অনুমতি প্রয়োজন হবে

ক্যাটাগরি চেনার জন্য বিভিন্ন রঙের কার্ড করতে হবে:

  • বার্ষিক পারিবারিক হেলথ কার্ড এদের ডাক্তার দেখান ফি। (এটা ৫০/- থেকে ১০০/-) টাকা
    বার্ষিক পারিবারিক হেলথ কার্ড-এর বিধান থাকতে পারে যেখানে একটি পরিবার বাৎসরিক ৫০/- বা ১০০/- টাকা (যা নির্ধারিত হয়) ফি প্রদান করে এই কার্ড সংগ্রহ করতে পারবে। এই কার্ডে পরিবারের সকল সদস্যদের নাম উলে­খ থাকবে। কার্ডে উলে­খিত যে কোন সদস্য ক্লিনিক বা হাসপাতালে বিনা পয়সায় ডাক্তার দেখাতে পারবে। এই কার্ড বাৎসরিক ভিত্তিতে নবায়ন করা যাবে।
  • টিকেট পাওয়া যাবে। যতবার যাবে প্রতিবারে ১০/- থেকে ১৫/- টাকা লাগবে।
    এছাড়া হাসপাতালে টিকেট করার ব্যবস্থা থাকতে পারে। যে সমস্ত পরিবার হেলথ কার্ড করবে না তারা হাসপাতালে টিকেট কেটে ডাক্তার দেখাতে পারবে। প্রতিবার ডাক্তার দেখাতে টিকেট কাটতে হবে যার মূল্য প্রতিবারে ১০/- থেকে ১৫/- টাকা (যা নির্ধারিত হয়)।

উপরোক্ত পদ্ধতিতে ক্লিনিক ম্যানেজমেন্ট কমিটি বিষয়টির শ্রেণীবিভাগ করবে। নিরাপদ ডেলিভারির জন্য ন্যূনতম খরচ ৩০০/- টাকা ধার্য করা হয়। কার্ড হোল্ডারগণ ডেলিভারির জন্য ফি দেবেন, কার্ড না থাকলে তিনি কত ফি দেবেন, বাইরের রোগীর চার্জ নির্ধারণ কত হবে, বাইরের লোক কি খরচ প্রদান করবে, তা ক্লিনিক ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করবে।

মুক্তি নারী ও শিশু উন্নয়ন সংস্থার কর্তৃপক্ষ মমতা মা, শিশু স্বাস্থ্য ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সামগ্রীক ব্যবস্থাপনার এবং নীতি মালার প্রয়োজনে ও বিশেষ জরুরী অবস্থায় পরিমার্জন, পরিবর্ধন করতে পারবেন।